বিশেষ প্রতিবেদক :
কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত ঘেঁষে কলাতলীর বেলী হ্যাচারী থেকে কস্তুরাঘাট পর্যন্ত শহর রক্ষা বাঁধ নির্মাণের প্রকল্পটি চূড়ান্ত হয়নি। সরকারী বিভিন্ন দপ্তরের সমন্বয়হীনতা, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা এবং দীর্ঘ সূত্রিতার কারণে শহর রক্ষা বাধের নকশা চূড়ান্ত করতে পারছে না সংশ্লিষ্ঠরা।
সূত্র জানায়, ২০০৮ সালে সাগরের করাল গ্রাস থেকে বেলাভূমি, ঝাউবীথি সহ নানা স্থাপনা রক্ষার্থে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত ঘেঁষে শহর রক্ষা বাধ নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এর আড়াই বছর পর ২০১১ সালের ৩ এপ্রিল কক্সবাজার জেলে পার্ক মাঠের জনসভায় ৮ কিলোমিটার দীর্ঘ শহর রক্ষা বাধ প্রকল্পটি দ্রুত বাস্তবায়নের কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতির পর একটি প্রকল্প ২০১১ সালের ২৫ আগষ্ট পরিকল্পনা কমিশনের কাছে প্রেরণ করে পানি উন্নয়ন বোর্ড। পরে কমিশনের পরামর্শক্রমে প্রকল্পটি সংশোধন করে ১০৪ কোটি টাকার আরেকটি ২০১২ সালের ৯ নভেম্বর প্রকল্পটি পুণরায় পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়। ২০১৪ সালের ৫ ফেব্রুয়ারী প্রস্তাবটি অর্থনৈতিক বিষয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা(একনেক) কমিটির সভায় উত্থাপিত হয়। সভায় প্রকল্পটি সফল বাস্তবায়নের জন্য পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সাথে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়, কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, যোগাযোগ মন্ত্রণালয়, পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় এবং প্রতিরক্ষামন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট সবার সাথে সমন্বয় করে নতুন করে প্রণয়ন পূর্বক জরুরী ভিত্তিতে এ কমিটির কাছে পূণরায় পেশ করার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়। কিন্তু সমুদ্র সৈকত এলাকায় ৭ ফুট উচু বাঁধ পর্যটকদের উপর বির”প প্রভাব ফেলার আশংকা থেকে পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সুপারিশে প্রকল্পটি বাতিল করা হয়। এরপর ২০১৬ সালে সৈকত ঘেষে ৩ ফুট উচু মেরিণ ড্রাইভ সড়ক নির্মাণ করার সিদ্ধান্ত নেয় জেলা প্রশাসন। পরে সেটি কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে হস্তান্তর করা হয়। কিন্তু চলতি বছরের শুর”র দিকে কউক প্রকল্পটি বাস্তবায়নে অপরাগতা প্রকাশ করলে আবারো শহর রক্ষা বাঁধ নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এটি বাস্তবায়নের জন্য আবারো পানি উন্নয়ন বোর্ডকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। এরপর থেকেই পানি উন্নয়ন বোর্ড নতুন করে নকশা প্রণয়ন করতে সমুদ্র সৈকত এলাকা নিয়ে গবেষণা শুরু করেছে।
এদিকে বাঁধটি নির্মাণ না হওয়ায় সমুদ্র সৈকত হুমকির মুখে পড়েছে। কস্তরাঘাট, নাজিরারটেক, সমিতিপাড়া, ডায়বেটিকস পয়েন্ট, কবিতা চত্বর, শৈবাল পয়েন্ট, সীইন পয়েন্ট, কলাতলী ও হ্যাচারী পয়েন্টে ভাঙ্গন অব্যাহত রয়েছে। গত ১০ বছরে ওই এলাকার ৫০ হাজার অধিক ঝাউগাছ ধ্বংস হয়ে গেছে। সাগরে বিলীন হয়েছে প্রায় ১ কিলোমিটার বিস্তীর্ণ বেলাভুমি। নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে অনেক স্থাপনা। ডায়বেটিকস পয়েন্ট থেকে কবিতা চত্বর ও কলাতলীর সুগন্ধা পয়েন্ট থেকে বেলী হ্যাচারী মোড় পর্যন্ত ওয়াক ওয়েকটি ভেঙ্গে গেছে। উপড়ে পড়েছে প্রায় ১০ টি বৈদুত্যিক খুটি।
এ বিষয়ে কক্সবাজার বন বিভাগ (দক্ষিণ) কর্মকর্তা আলী কবির বলেন, প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমসহ ঘূর্নিঝড়ে সৈকত এলাকার হাজার হাজার ঝাউবণ বিনষ্ট হয়।
এবিষয়ে সেভ দ্যা ন্যাচার অব বাংলাদেশ এর চেয়ারম্যান মোয়াজ্জেম হোসাইন বলেন, শহর রক্ষা বাঁধটি দ্র”ত নির্মাণ করা না হলে কলাতলী থেকে কস্তুরাঘাটের বেলাভূমি রক্ষা করা দুস্কর হবে। তবে বাঁধটি হতে হবে পরিবেশ ও পর্যটক বান্ধব।
এ বিষয়ে কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শবিবুর রহমান বলেন, গত তিনবছরের এই আট কিলোমিটার এলাকার প্রায় ৩০০ ফুট বেলাভূমি সাগরে বিলীন হয়েছে। এই ভাঙ্গন রোধে ১০৪ কোটি টাকা ব্যয়ে শহর রক্ষা বাধ প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। কিন্তু প্রকল্পটি ২০১৫ সালে একানেকে সভায় উথাপিত হওয়ার পর থেকে আর আলোর মুখে দেখেনি। এখন আমরা আবার নতুন করে একটি প্রকল্প তৈরি করার চেষ্টা করছি। এই লক্ষ্যে ভাঙ্গন এলাকার বালুর গঠন ও পরিবেশের অন্যান্য বিষয়কে প্রাধন্য দিয়ে একটি গবেষণা করা হচ্ছে। আশা করছি খুব শ্রীঘই আমরা শহর রক্ষা বাধের নতুন নকশা প্রণয়ন করে একটি প্রকল্প তৈরি করতে পারব।
পাঠকের মতামত: